সকালে হাঁটার ১০ টি উপকারিতা - সুস্থ থাকার জন্য আপনার জানা উচিত

সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ, আজকের আলোচ্য বিষয় হলো সকালে হাঁটার উপকারিতা সম্পর্কে। বর্তমানে আমরা বেশিরভাগ মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর। আমরা অনেকেই পরিশ্রম বা ব্যায়াম করি না বললেই চলে। যার ফলে আমাদের শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন ধরনের অসুখ।  হাঁটা হল সব ধরনের ব্যায়ামের মধ্যে সবচেয়ে উপকারী এবং সহজ একটি ব্যায়াম। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট হাঁটা উচিত। সকালে হাঁটা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।এর ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও স্বাস্থ্যের নানান উপকার হয়।

সকালে হাঁটার আগে করণীয়: 

সকালে হালকা ব্যায়াম এর মধ্যে হাঁটা বা জগিং হলো সর্বোৎকৃষ্ট। সকালে হাঁটার আগে খালি পেটে এক গ্লাস পানি খাওয়া যেতে পারে। ব্যায়ামের আগে বেশি কিছু বা ভারী খাবার খাওয়ার ঠিক নয়। হালকা খাবার যেমন চিরতার রস বা ইসবগুলের ভুষি খাওয়া ভালো। অথবা কাপ গ্রিন টি হলে আরো ভালো হয়। সামান্য কাঁচা ছোলা ও খাওয়া যেতে পারে।

সকালে হাঁটার উপকারিতা:

সকালে হাটলে আমাদের শরীর এবং মন শান্ত থাকে এর ফলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বৃদ্ধি পায়।সকালে হাঁটার ফলে অনেক ধরনের উপকারিতা আমরা পেয়ে থাকি। তা নিচে উল্লেখ করা হলো: 

১.হার্ট ভালো থাকে: 

নিয়মিত হাঁটলে হার্টের ব্যায়াম হয় । পরিশ্রমের সাথে সাথে হার্ট বিট বাড়ে। প্রতি মিনিটে হার্ট যতবার রক্ত সঞ্চালনের জন্য বিট করে তাকে হার্টবিট রেট বলে। সকালে হাঁটার ফলে হার্টের রক্তসঞ্চালন বেড়ে গিয়ে হার্ট সুস্থ থাকে।হার্টের টিস্যুগুলো সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

২.স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়:

আমরা যদি প্রত্যেকদিন হাঁটি তাহলে আমাদের হৃদপিন্ডের মধ্যে মধ্যে বিশুদ্ধ বাতাস প্রবেশ করে। এ বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে হৃদপিণ্ড রক্তকে বিশুদ্ধ করে ও অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত মস্তিষ্কে পৌঁছে দেয় বলে আমাদের মস্তিষ্ক সচল থাকে ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।

৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে: 

প্রতিদিন সকালে যদি নিয়মিত হাঁটা হয় তাহলে আমাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। সকলে হাঁটলে আমাদের লোহিত রক্ত কণিকায় যে চর্বি থাকে সে চর্বি গুলো ঝরে যায় এবং এর ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে: 

ডায়াবেটিস রোগীদের প্রচুর পরিমাণে হাঁটতে বলা হয়।ডাক্তার আগে ও পরে ব্লাড সুগারের পরিমাণ মেপে হাঁটার রুটিন দিয়ে দেয়। হাঁটার মাধ্যমে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ থাকে।

৫. মানসিক চাপ দূর করে: 

বর্তমানে মানসিক চাপ বড় ধরনের সমস্যায় পরিণত হয়েছে।কর্মব্যস্ত জীবনে সামাজিক কর্মকান্ড না থাকা পারিবারিক বা সামাজিক কর্মব্যস্ততায় ভোগে। ফলে ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পাওয়া বা ঘুম না হওয়ার মতো বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। হাঁটাহাঁটি করার ফলে এ ধরনের চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

 তাই নিয়ম করে সকালে অন্তত ২০ মিনিট হাঁটা উচিত। 

৬.জয়েন্টের ব্যাথা কমায়: 

নিয়মিত যদি সকালে হাঁটাহাঁটি করা হয় তবে আমাদের শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের ব্যথা কমে যায়। এছাড়া বাত ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। 

৭. ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে: 

একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন যে, নিয়মিত হাঁটার ফলে কোলন ক্যান্সার বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।

এছাড়া ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা নিয়মিত হাঁটেন দেখা গেছে তাদের কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যদের থেকে তুলনামূলক কম হয়। 

৮. মানসিক অবসাদ দূর হয়: 

প্রতিদিন হাটলে সকলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাক্ষেত্র উপভোগ করা যায়। সকালের প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি মনকে ভালো করে তোলে।

তাই সকালে কিছুক্ষণ হাঁটার ফলে সারাদিন কাজের উৎসাহ বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে যায়।

৯. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে: 

প্রতিদিন হাঁটার মাধ্যমে আমাদের শরীরের সকল কোষগুলো সক্রিয় থাকে। ফলে প্রত্যেকটি কোষে বিশুদ্ধ অক্সিজেন ও রক্ত পৌঁছাতে পারে।

এভাবে নিয়মিত হাঁটার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

১০. শরীরে অতিরিক্ত চর্বি কমায়:

নিয়মিত হাঁটার মাধ্যমে শরীরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চর্বি কমতে থাকে। ভালো কোলেস্টের বাড়ে এবং মন্দ কোলেস্টেরল কমে। ফলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে যায়। 

সকালে হাঁটার জন্য আরামদায়ক ও ঢিলেঢালা পোশাক অবশ্যই পরিধান করতে হবে। 

এছাড়া খালি পেটে কখনোই বেশি হাঁটা ঠিক না। কারণ খালি পেটে হাঁটলে শরীরের এনার্জি অনেকটাই কমে যায় ও রক্তের সুগারের মাত্রা কমে যায়। 

এর ফলে মাথা ঘোরার সৃষ্টি হতে পারে এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সকালে হাঁটার আগে কিছুটা হলেও অবশ্যই পানি পান করা উচিত কারণ ঘামের মাধ্যমে শরীরের পানি বের হয়ে যায়। ফলে শরীরের পানির পরিমাণ কমে যায়। তাই হাঁটাহাঁটির মাঝে পানি পান করা উচিত। 

এছাড়া একটা ব্যাপার লক্ষ্য রাখতে হবে যে হাঁটার পরিবেশ যেন অবশ্যই সুন্দর হয়। হাঁটলে আমাদের শরীর মন ভালো থাকে সুতরাং আলো বাতাস খোলামেলা জায়গা হাঁটার জন্য উপযুক্ত। 

সুতরাং স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ও শরীর ভালো রাখার জন্য নিয়মিত হাঁটুন এবং সুস্থ থাকুন।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

লেখক সম্পর্কেঃ

আমি একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। লেখালেখি করতে ভালোবাসি।